মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যশোরে দ ‘জন, পটুয়াখালীতে দু’জন, ভোলায় দু’জন, পিরোজপুরে একজন, সন্দ্বীপে একজন ও সাতক্ষীরায় একজনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে।
যশোরে ১৩৫ কিলোমিটার বেগে তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। বুধবার (২০ মে) সারাদিন থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হলেও রাতে প্রচণ্ড বেগে ঝড় বয়ে যায়। রাত ৮টার পর থেকে বাড়তে থাকে ঝড়ের গতিবেগ।
যশোরে সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হওয়ার খবর দিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। গোটা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা, ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চৌগাছায় গাছ চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যশোরের প্রাথমিক স্কুলগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খুলে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মাধ্যমিক স্কুল ভবনও ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, বুধবার মধ্যরাত ১২টার পর যশোরের ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যায়। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় ঝড়ো হওয়া। রাত ৮টার পর থেকে ঝড়ের গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।
এদিকে, ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ গাছপালা ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শহরের খড়কি এলাকার বেশকিছু ঘরের টিন উড়ে গেছে। রাতে গোটা শহরের রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে রয়েছে দোকানের সাইনবোর্ড, টিনসহ বিভিন্ন ছিন্নভিন্ন জিনিসপত্র। চৌগাছায় গাছচাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে আম্ফানের প্রভাবে পটুয়াখালীতে দুজন নিহত হয়েছেন। বুধবার (২০ মে) সন্ধ্যায় গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে রাসেদ (৬) নামে এক শিশু এবং কলাপাড়ায় মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে ধানখালীর ছৈলাবুনিয়া এলাকায় খালে নৌকা ডুবে নিখোজঁ শাহ আলম নামে এক স্বেচ্ছাসেবীর মৃত্যু হয়েছে।
গলাচিপা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যায় গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি এলাকায় ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ছয় বছরের শিশু রাসেদ মারা যায়।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে সকালে ধানখালীর ছৈলাবুনিয়া এলাকায় খালে নৌকা ডুবে নিখোজঁ স্বেচ্ছাসেবী শাহআলমের মরদেহ সন্ধ্যায় উদ্ধার করে ডুবুরি দল।
অপরদিকে ভোলায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় গাছ পড়ে মো. ছিদ্দিক ফকির (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর মানিকা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চর কচ্ছপিয়া গ্রামের বাসিন্দা। বুধবার (২০ মে) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। দক্ষিণ আইচা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুন অর রশিদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
অন্যদিকে, ঝড়ের কবলে পড়ে ভোলায় মাঝিসহ ১১ জন যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার ডুবে যায়। এতে রফিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার এ ঘটনা ঘটে। মৃত রফিকুল ইসলাম ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসাননগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাসাননগর গ্রামের আবু কালামের ছেলে।
রফিকুল ইসলামের মৃত্যুর বিষয়ে বোরহানউদ্দিন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বলেন, মজুচৌধুরীরহাট থেকে মা-স্ত্রীকে নিয়ে ভোলায় আসছিলেন রফিকুল। ট্রলারে ১১ জন ছিলেন। সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও রফিকুল ডুবে মারা যান।
এছাড়া সাতক্ষীরা শহরের সংগীতা মোড় এলাকায় আম কুড়াতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ওই মধ্য বয়সী নারী শহরের কামালনগর এলাকার বাসিন্দা।
সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। এখনও রাত সাড়ে ৯টার দিকেও প্রচণ্ড গতিবেগে ঝড় চলছে বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি।
দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে আম্ফান আসার আগেই জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. সালাউদ্দিন (১৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। দুপুরের দিকে সন্দ্বীপ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সন্দ্বীপ থানার পরিদর্শক তদন্ত মো. সোলাইমান জানান, উপকূলে ঘাস কাটতে গিয়ে ওই যুবক জোয়ারের পানিতে পড়ে যান। পরে স্থানীয়রা তার মরদেহ উদ্ধার করে।
আর পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে দেয়াল চাপা পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলা শহরে মঠবাড়িয়া কলেজ এলাকায় বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান মঠবাড়িয়া থানার ওসি মো. মাসুদুজ্জামান।